নগরীর প্রান্তিক এক চায়ের দোকান, যেখানে আশেপাশের স্কুল, কলেজ, এবং অফিসের মানুষজন নিয়মিত আসত নাস্তার জন্য। দোকানটির মালিক হাসান মিয়া। জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে চা বিক্রি করে, কিন্তু ছাত্রলীগের জনসভা তার জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছিল। হাসানের দোকান ছিল ছাত্রলীগের বিশেষ আস্তানা। প্রতিদিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখানে চা-সিঙ্গারা খেতে আসত। বিশেষ কোনো প্রোগ্রাম হলে হাসানের দোকান থেকেই সিঙ্গারা-পুরি সাপ্লাই হতো।
একদিন ছাত্রলীগ বড় একটি জনসভার আয়োজন করল, আর স্বাভাবিকভাবেই সেই জনসভার জন্য সিঙ্গারা সরবরাহের দায়িত্ব পেলেন হাসান মিয়া। তিনি রাতদিন এক করে সেই সিঙ্গারাগুলো বানিয়েছিলেন। মনে মনে ভাবছিলেন, এই সিঙ্গারা তাকে আর্থিক স্বস্তি এনে দেবে, তার মেয়ে বিয়ের জন্য যে টাকা দরকার, তা এই কাজের মাধ্যমেই পূরণ হবে। হাসানের মুখে তখন হাসি লেগেই ছিল।
কিন্তু হঠাৎই খবর এল, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে, টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজ। পুরো দেশের রাজনীতি যেন অন্ধকারে হারিয়ে গেছে, আর তার সাথে হাসানের জীবনের একটি বড় অংশও। তিনি ভাবছিলেন, এখন এই জনসভার সিঙ্গারা কেউ নেবে না। এত পরিশ্রম আর এত টাকা খরচ করে যে খাবার বানিয়েছিলেন, তা আর বিক্রি হবে না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভিড়ও আর হবে না তার দোকানে।
হাসান মিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। নিজের অজান্তেই তিনি দোকানের ভেতরে গিয়ে চুপ করে বসে রইলেন। আশেপাশের মানুষের চোখে তার দোকান ছিল নির্জন। বেলা শেষে দোকানের ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে পাশের লোকজন দরজা ঠেলে ঢুকে দেখল, হাসান মিয়া নিজেকে পৃথিবী থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
তার আত্মহত্যার পেছনে কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নয়, বরং এটি ছিল একজন সাধারণ মানুষের জীবন সংগ্রামের পরাজয়।
নিষিদ্ধ হলো ছাত্রলীগ সিঙ্গারা দোকানদারের আত্মহত্যা
Tahsan Mahmud
0
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন